২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি, প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ সাক্ষাৎকারে অংশ নেন মেজর শরিফুল হক ডালিম। দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনাবলী নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রকাশ করেন।

সাক্ষাৎকারের শুরুতে তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, "বিপ্লব সমাজ বা যেকোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া।" তিনি নতুন প্রজন্মকে নীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি উল্লেখ করেন, "সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে ৭১'এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।" এ বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন এবং দাবি করেন, "মুজিব স্বয়ং পাকিস্তান আর্মির কাছে ধরা দিলেন।" তিনি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রশংসা করেন, যা দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্দীপ্ত করেছিল।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি সম্পর্কে তিনি বলেন, "১৫ই আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়।" তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই কিছু নেতার কার্যকলাপ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

তিনি বলেন, "মুজিব কায়েম করলেন একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক বাকশাল।" এমনকি তিনি দাবি করেন, মুজিবের শাসনামলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, যা ১৫ আগস্টের ঘটনার পটভূমি তৈরি করেছিল।

জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, "বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের না হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম বা অন্যান্য স্বনামধন্য দেশীয় কবিদের গান হতে পারত।" তিনি ভিনদেশী কবির গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণকে সমালোচনা করেন।

শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে মানার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি একজন মুসলমান হিসাবে কাউকে জাতির পিতা, জাতির মাতা, জাতির ভাতিজা এগুলো আমি মানি না।" এ বক্তব্যে তিনি এই উপাধিগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির সংখ্যা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, এই সংখ্যাগুলো অতিরঞ্জিত। তিনি বলেন, "এই ৩০ লাখ কথাটা জন্ম নিলো কীভাবে সেটার ইতিহাস আমার বইয়ের মধ্যে লেখা আছে।"

সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাঁর বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করেছেন।